রাশিদুল ইসলাম: [২] এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স সমীক্ষা বলা হচ্ছে, বায়ুদূষণের কারণে ঢাকা শহরের নাগরিকরা গড়ে আট বছরের বেশি আয়ু হারাচ্ছে। দ্রুত বর্ধনশীল নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে সৃষ্ট বায়ু ও প্লাস্টিক দূষণের কারণে ঢাকা নগরবাসী মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।

[৩] নাগরিকদের মধ্যে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে অথচ সে অনুযায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে না। দূষণের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতিও হচ্ছে।

[৪] রোববার ঢাকায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বায়ু ও প্লাস্টিক দূষণের বিষয়ে সচেতনতা বিল্ডিং এর মাধ্যমে সবুজ শহর প্রচার’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

[৫] অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রধানত দুর্বলভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা ভবন নির্মাণ কার্যক্রম এবং অনুপযুক্ত মোটরযান চালানোর কারণে শহরে বায়ু দূষণ বাড়ছে। 

[৬] বক্তারা বলেন, বায়ু দূষণে স্বাস্থ্যগত প্রভাব হিসেবে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, নিম্ন শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, পালমোনারি রোগ, ইস্কেমিক এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং দীর্ঘস্থায়ী হৃদরোগ সহ বিভিন্ন রোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

[৭] দূষিত কণা এমনকি নবজাতকের স্নায়ুতন্ত্রকেও প্রভাবিত করতে পারে এবং অপরিষ্কার বাতাসের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় বাড়িয়ে রোগ সৃষ্টি করতে পারে। 

[৮] মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বায়ু দূষণজনিত রোগের কারণে প্রতিটি নাগরিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য গড়ে ৮,৩৩৪ টাকা ব্যয় করেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ঢাকা শহরের এক কোটিরও বেশি মানুষ নিম্নমানের বায়ুর সংস্পর্শে রয়েছে। 

[৯] দেশের শহরগুলিতে বায়ু দূষণের মাত্রা বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা থেকে ১৫ গুণ বেশি এবং বার্ষিক বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাম্বিয়েন্ট এয়ার কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড থেকে পাঁচ গুণ বেশি।

[১০] শুধুমাত্র ঢাকাতেই জনপ্রতি প্লাস্টিক ব্যবহার ২০০৫ সালে ৯.২ কেজি থেকে বেড়ে ২০২০ সালে ২২.২৫ কেজি হয়েছে।

[১১] অন্যদিকে, ঢাকায় প্রতি বছর ৬৪৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে ৪৮ শতাংশ মাটিতে ফেলা হয়, ৩৭ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়, ১২ শতাংশ নদীতে মেশে এবং তিন শতাংশ অন্যান্য উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। 

[১২] প্লাস্টিক দূষণের কারণে পর্যটন, জলজ চাষ এবং মৎস্য শিল্পের জন্য অর্থনৈতিক খরচ বৃদ্ধি পেতে পারে। ২০২০ সালে পর্যটন, জলজ চাষ এবং মৎস্য চাষ থেকে আনুমানিক গড় বার্ষিক আয় হ্রাস পায় যথাক্রমে ১১.৫ মিলিয়ন এবং মোটামুটি ২ মিলিয়ন ডলার।

[১৩] বিষাক্ত প্লাস্টিক কার্ডিওভাসকুলার, জিনোটক্সিক এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনালের মতো বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। কর্মশালায় বায়ু দূষণ কমাতে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং সবুজ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। 

[১৪] এছাড়া প্লাস্টিকের বিকল্প, সাশ্রয়ী মূল্যের এবং বিকল্প উপকরণগুলির ব্যবহারকে বৃদ্ধি করার কথা বলা হয়েছে। 

[১৫] অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং সিপিডির রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব